ক্রসিং ওভার (Crossing Over):
মায়োসিস-১ এর প্যাকাইটিন উপ-পর্যায়ে এক জোড়া সমসংস্থ ক্রোমোসোমের দুটি নন-সিস্টার ক্রোমাটিড-এর মধ্যে বিনিময় হওয়াকে ক্রসিং ওভার বলে। ক্রসিং ওভারের ফলে ক্রোমোসোমের জিনসমূহের মূল বিন্যাসের পরিবর্তন ঘটে এবং লিঙ্কড জিনসমূহের মধ্যে নতুন সমন্বয় (combination) তৈরি হয়।
ক্রসিং ওভারের কৌশল :
মিয়োসিস -১ এর প্রোফেজের জাইগোটিন উপপর্যায়ে ক্রোমোজোম পারস্পরিক জোড় বাধে একে সিইন্যাপসিস বলে। প্রতিটি জোড়ার নাম বাইভ্যালেন্ট।
*প্রথমে দুটি নন-সিস্টার ক্রোমাটিড একই স্থান বরাবর ভেঙে যায় (Endonuclease এনজাইম এর কারণে) এবং দুটি সিস্টার ক্রোমাটিড গঠন করে। প্রতিটি বাইভ্যালেন্টে ৪ টি ক্রোমাটিড সৃষ্টি হয় একে টেট্রোড বলে।
*পরে একটি সাথে অপরটির অন্য অংশ পুনরায় জোড়া লাগে ligase এনজাইমের প্রভাবে। ফলে কায়াজমা (X আকৃতি) সৃষ্টি হয়।
*শেষ পর্যায়ে প্রান্তীয়করণের মাধ্যমে ক্রোমাটিডের বিনিময় শেষ হয়। ক্রসিং ওভারের ফলে *ক্রোমাটিডের মধ্যে অংশের বিনিময় ঘটে, সাথে সাথে জিনেরও বিনিময় ঘটে (যেহেতু জিন ক্রোমোসোমেই বিন্যস্ত থাকে)। জিন-এর বিনিময়ের ফলে চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের বিনিময় হয়, ফলে জীবে চারিত্রিক পরিবর্তন ঘটে।
ক্রসিং ওভারের গুরুত্ব বা তাৎপর্যঃ
কিছু সংখ্যক নিম্নশ্রেণির জীব ছাড়া সব উদ্ভিদ ও প্রাণীর মধ্যে ক্রসিং ওভার ব্যাপকভাবে পরিলক্ষিত হয়। ক্রসিং ওভারের গুরুত্ব নিচে উল্লেখ করা হলো :
*ক্রসিং ওভারের ফলে দুটি ক্রোমাটিডের মধ্যে অংশের বিনিময় ঘটে, ফলে জিনগত পরিবর্তন সাধিত হয়।
*জিনগত পরিবর্তন সাধনের ফলে সৃষ্ট জীবে বৈশিষ্ট্যগত পরিবর্তন সাধিত হয়।
*বৈশিষ্ট্যগত পরিবর্তনের মাধ্যমে সৃষ্টিকুলে আসে বৈচিত্র্য, সৃষ্টি হয় নতুন পরিবেশে টিকে থাকার ক্ষমতা, আবার কখনো সৃষ্টি হয় নতুন প্রজাতি।
*ক্রসিং ওভারের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত উন্নত বৈশিষ্ট্য বিশিষ্ট নতুন প্রকরণ সৃষ্টি করা যায়। এভাবেই ফসলি উদ্ভিদের ক্রমাগত উন্নতি সাধন করা হয়।
*কৃত্রিম উপায়ে ক্রসিং ওভার ঘটিয়ে বংশগতিতে পরিবর্তন আনা সম্ভব। কাজেই প্রজননবিদ্যায় ক্রসিং ওভারের যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে।
*গবেষণার ক্ষেত্রেও ক্রসিং ওভারের গুরুত্ব রয়েছে। কারণ, ক্রোমোসোমে জিনের রেখাকার বিন্যাস প্রমাণে বা ক্রোমোসোম ম্যাপিং-এ ক্রসিং ওভার বৈশিষ্ট্য ব্যবহৃত হয়।
*জেনেটিক ম্যাপ তৈরি করা ও ক্রোমোসোমে জিনের অবস্থান নির্ণয়।
আরও দেখুন...